জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে—সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে নিজেদের সুপারিশে এটি রাখার বিষয়টি কমিশনের বিবেচনায় আছে। আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনে এই সময় আরও বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে বলে কমিশন–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও ভোটের সময় এবং পথ–পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশন এখনো তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেনি। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য দল তিনটির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে কমিশন।
গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দলগুলো একমত। এখন কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে, গণভোটে কী কী বিষয় থাকবে এবং গণভোট কখন হবে—মোটাদাগে এই তিন বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে নিজেরা সুপারিশ দেবে। তবে এটি সনদের অংশ হবে না। আগামী ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে আগামী বুধ বা বৃহস্পতিবার কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারকে দেবে।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে কিছু প্রস্তাবে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হলেও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো একমত হতে পারেনি। গণভোটের সময় (জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে নাকি আগে হবে), কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে—এসব বিষয়ে রাজনৈতিক মতভিন্নতা আছে।
গণভোটের আগে ‘বিশেষ আদেশ’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন মনে করছে, গণভোট করতে হলে আগে একটি বিশেষ আদেশ জারি করতে হবে। এটি হবে গণভোটের ভিত্তি। গণভোট কবে হবে—সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চায় কমিশন। বিষয়টি ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকেও অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়টি দলগুলো মেনে নেবে বলে আশা করছে কমিশন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামতে সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এই দাবি আছে। যেমন জামায়াতে ইসলামী বলেছে, আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে; প্রথম অধিবেশন হবে সংবিধান সভা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ করছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কমিশনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হবে। এর আগেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।

