এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নজিরবিহীনভাবে বেড়ে প্রায় ৮৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্বলতার কারণে আর্থিক সংকট সামনে এসেছে।
ব্যাংকের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের সর্বশেষ বিবরণী অনুযায়ী, এবি ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ৩৫ হাজার ৯৮২ কোটি। এর মধ্যে ৩০ হাজার ১৩৮ কোটি সময়মতো আদায় করা যায়নি এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ১১৫ কোটি, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশ। কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর খেলাপি ঋণ এত বেশি হওয়ার কারণ আগের ২০ হাজার ২৩ কোটি ‘গোপন করা’ বা প্রকাশ না করা খেলাপি ঋণ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেখানো হয়েছে।
এমন সময়ে এ তথ্য সামনে এলো যখন সরকারের ব্যাংকিং রিফর্ম টাস্কফোর্সের সুপারিশে একটি বিদেশি অডিট ফার্ম এবি ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অডিটর ইতোমধ্যে ব্যাংকটির সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনা করেছে। যেখানে ঋণ সঠিকভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে কি না তা যাচাই করা হয়।
অডিটর খুব শিগগিরই পুরো প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
মন্দ ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করা
এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবি ব্যাংক বহুদিন ধরে তাদের চাপে থাকা সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ গোপন করে আসছিল। তাদের মতে, এর পেছনে রয়েছে অনিয়মিত ব্যবস্থাপনা, ঋণ সুবিধার অপব্যবহার এবং বড় ঋণ আদায়ে দীর্ঘদিনের ব্যর্থতা।
তারা আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভিশন বিলম্বিত সুবিধা ব্যবহার করে তাদের আর্থিক অবস্থা বাস্তবের চেয়ে ভালো দেখাত। এভাবে তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মন্দ ঋণকে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা বিষয়টি আড়াল করে রেখেছিল।
তবে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশের পর দেখা গেছে, ব্যাংকটির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচকই এখন অবনতির দিকে।
অডিটের জেরে আমানত তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে এবি ব্যাংক, যেন তারা প্রতিদিনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। ব্যাংকটি এমন সময়ে এই সহায়তা চেয়েছে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি দুর্বলকে ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় আছে।


