বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আগারগাঁও কার্যালয়ে এখন কর্মব্যস্ত পরিবেশ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরে চলছে ফাইল দেখা, পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই, ফল প্রকাশের প্রস্তুতি আর প্রার্থীদের তথ্য যাচাইয়ের ব্যস্ততা। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন তাঁদের হাতে একসঙ্গে চলছে চারটি বিসিএস পরীক্ষা ও একটি অভ্যন্তরীণ নিয়োগ পরীক্ষা ফল প্রস্তুতির কার্যক্রম। কর্মব্যস্ততার মধ্যেই এগোচ্ছে ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের ফল প্রকাশের কার্যক্রম।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ২০২৫-এর ফল প্রকাশের প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত ২১ জুলাই। এর এমসি কিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০ অক্টোবর। পিএসসি জানিয়েছে, ফল প্রকাশের সব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি প্রশাসনিক কোনো জটিলতা না হয়, তবে এই সপ্তাহেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে; না হলে পরের সপ্তাহে ফল নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করা হবে।
পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন একসঙ্গে একাধিক বিসিএসের ফল প্রস্তুতের কাজ করছি। এর মধ্যেই ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের ফল প্রকাশের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ করতে।’
৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ২০২৫ মূলত শিক্ষা ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৬৮৩ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এই বিসিএসের মাধ্যমে। আবেদন করেছেন ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী—অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন গড়ে ৪৫৬ জন। এটি পিএসসির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর একটি বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
সরকারি কলেজের এক অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক–সংকট রয়েছে। উচ্চশিক্ষা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। শিক্ষক–সংকটের কারণে সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
একসঙ্গে চারটি বিসিএসের কাজ
৪৯তম বিশেষ বিসিএসের ফল প্রস্তুতের পাশাপাশি কমিশন এখন ব্যস্ত আরও তিনটি সাধারণ বিসিএসের কার্যক্রমে। এর মধ্যে ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬ হাজার ৫৫৮ জন। পিএসসি জানিয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এই বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে ২ হাজার ৩০৯ জনকে এবং নন-ক্যাডারে ১ হাজার ২২ জনকে।
এদিকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন চলছে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূল্যায়ন শেষ হলেই মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়েছেন ৩ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি প্রার্থী। এখন চলছে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজ। কমিশন জানিয়েছে, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
এক বছরে একটি বিসিএসের লক্ষ্য
পিএসসি গত বছর থেকে এক বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এটি বাস্তবায়ন করা সহজ নয়, তবে গত এক বছরে সেই পরিকল্পনা অনেকটাই বাস্তব রূপ পেয়েছে। এখন থেকে প্রতিবছরের নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং পরের বছরের অক্টোবরের মধ্যেই ফল প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে প্রকাশ করে পিএসসি । কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই তাঁরা এখন নির্ধারিত সময়সূচির মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।
৪৯তম বিশেষ বিসিএস ঘিরে তরুণদের মধ্যে উৎসাহ এখন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেওয়ার স্বপ্নে যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের কাছে এটি একটি বিশেষ সুযোগ।

