রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না পেয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ফটকের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ‘আমজনতা দল’-এর সদস্যসচিব তারেক রহমান। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত তার অনশনের ১২৫ ঘণ্টা পেরিয়েছে। দীর্ঘ অনশনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে।
দলের নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন তারেক রহমান। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় জানিয়েছে, দল নিবন্ধনের বিষয়ে বিধিমালার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গত ৪ নভেম্বর ইসি তিনটি নতুন রাজনৈতিক দলকে—বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নিবন্ধন না পাওয়ায় ওই দিন বিকেল ৪টা থেকেই ইসির ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন আমজনতা দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের সামনেই শুয়ে আছেন তারেক রহমান। তার ডান হাতে ক্যানুলা লাগানো, স্যালাইন চলছে। বাম হাতেও রয়েছে মেডিকেল টেপ। তাকে ঘিরে আছেন উৎসুক জনতা, ইউটিউবার ও গণমাধ্যমকর্মীরা। কত ঘণ্টা অনশন চলছে, তা একটি কাগজে লিখে কিছুক্ষণ পরপর প্রদর্শন করছেন দলটির সদস্যরা।

সকাল থেকেই তারেক রহমানের স্যালাইন চলছে। তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না, দিনের বেশির ভাগ সময় শুয়েই কাটাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর চোখ মেলছেন। উপস্থিত লোকজনকে ডেকে তিনি নিজ দলের কাগজপত্র দেখিয়ে অভিযোগ করছেন, নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ইসি তাদের নিবন্ধন দিচ্ছে না।
এ পর্যন্ত কতটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তারেক রহমান জানান, ‘ছয় থেকে আটটি স্যালাইন দেওয়া হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ইসির পক্ষ থেকে একজন যুগ্ম সচিব এসেছিলেন আমার অনশন ভাঙাতে। কিন্তু নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাব না।’
তারেকের সঙ্গে আছেন তার শ্বশুর খুলনার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, তারেকের বাবা-মা দুজনই বয়োজ্যেষ্ঠ। তারা ফোনে ছেলের খোঁজ নিচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এই স্থান ছেড়ে যাবেন না।
গত ৫ নভেম্বর আমজনতা দল কেন নিবন্ধন পায়নি, তা জানিয়ে দলটিকে চিঠি দেয় ইসি। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মো. রফিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তথ্য সঠিক আছে। তবে ২২টি জেলার মধ্যে ২টি জেলা এবং ১০০টি উপজেলার মধ্যে ৬৭টি উপজেলায় সঠিক ও কার্যকর অফিস থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব উপজেলা অফিসে ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকার তথ্যও পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
‘৫২২ ঘণ্টা হলেও কিছু করার নেই’
এদিকে আমজনতা দলের নিবন্ধন নিয়ে ইসি নতুন করে ভাবছে কি না, জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী হবে সেটা আপনারাই ভালো জানেন, আমরা কী বলব?’
তারেকের অনশনের ১২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আনলে ইসি সচিব বলেন, ‘৫২২ ঘণ্টা হলেও কিছু করার নেই। নির্বাচন কমিশন কি বিধিমালার বাইরে যেতে পারে? আপনি উত্তর পেয়ে গেছেন।’
পরে বিকেল ৩টার দিকে আখতার আহমেদ বলেন, কেউ কোনো বিষয়ে সংক্ষুব্ধ থাকলে কমিশনের কাছে আপিলের মাধ্যমে তা জানাতে পারেন।
এদিকে নিবন্ধনের দাবিতে ইসির গেটের সামনে দিনভর মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ একুশে পার্টি, নতুন বাংলা, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ এবং বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা-কর্মীরাও অবস্থান করছেন।

