জাতীয়তাবাদী দর্শন এবং এর প্রয়োগ একটি জাতির অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রধান ভিত্তি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জাতীয়তাবাদের প্রবল চেতনার বিকাশ ও সমৃদ্ধির ভেতর দিয়েই একেকটি জাতিসত্তা নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদও এর ব্যতিক্রম নয়। এই জাতীয়তাবাদের শেকড় গ্রোথিত রয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রতিটি অধ্যায়ে। এই ধারনার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য আত্মদান বাঙালির মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রকাশ ঘটায়। পরবর্তীতে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ জাতীয়তাবাদকে নতুন রূপ দেয়।
যে কোনো বিপ্লব হলো- সামরিকায়ন ও জনতার এক অনির্বচনীয় যুগলবন্দী আর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম ছিলেন সেই যুগলবন্দীর এক কুশলী সুরকার। দেশমাতৃকার টানে তিনি উপেক্ষা করেছিলেন অনাগত সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। অকুন্ঠ চিত্তে তিনি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়, তাঁর কণ্ঠে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
শহীদ প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক উস্কে দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইতিহাসের বিচারে সেই বিতর্ক বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কেননা তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের বিপরীতে একজন সামরিক নেতৃত্বের ঘোষণা নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের কাছে ছিলো সাহস ও উদ্দীপনার এক অমোঘ অস্ত্র।
তদানীন্তন পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য একরকম তৈরী হয়েই ছিলেন। বলা যায়, তাঁর এই আত্মসমর্পণ তাঁকে নিরাপদ করলেও নিরাপত্তাহীন করে গিয়েছিল কোটি কোটি বাংলাদেশীদের। এমন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় একজন সামরিক অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা নিছক সংবাদ পাঠকের দায়িত্ব ছিলো না। বরং স্বাধীনতার ঘোষণার ভেতর দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি নতুন জাতি রাষ্ট্রের।
সেনাবাহিনীর একজন মেজর যখন দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিঃশঙ্কচিত্তে নিজের এবং পরিবারের জীবনকে বিপদাপন্ন করে ঘোষণা করেন ‘উই রিভোল্ট’, তখন ব্যক্তি হয়ে ওঠেন কালোত্তীর্ন। যখন একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার ঘোষণা করেন, তখন স্বাধীনতা ও ব্যক্তি হয়ে ওঠেন একে অপরের পরিপূরক। কালের স্রোতে সময়ের প্রবাহমানতায় যিনি তাঁর সত্তাকে বিলীন করে দেন জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে, তখন তিনি হয়ে ওঠেন তার এক মূর্ত প্রতীক। জাতির সেই মূর্ত প্রতীকের নাম ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম’।
মেজর জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সম্পূর্ণ পাঠ এখনো হয়ে ওঠেনি। কিংবা বলা যায়- প্রচারবিমুখ বীরমুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম পাঠোদ্ধার দুরূহ এবং অনতিক্রম্য তাঁর ভাবনার পরিধি। তবুও যেটুকু আমরা জেনে যায় পরম্পরায় এবং আমরা এমন একজন সামরিক কর্মকর্তাকে দেখি, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকেও ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠেন জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বাহক। ঠিক তেমনিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে, জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে সরাসরি রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হওয়াটা ছিলো- দেশপ্রেমের প্রকাশ এবং জন্মভূমির প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় ভূমিকা ও সাহসী নেতৃত্বের পুরস্কার স্বরুপ মেজর জিয়াউর রহমানকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে একই বছরের ৭ই নভেম্বর অব্দি সময়কাল ছিলো- যেমন ঘটনাবহুল, ঠিক তেমনি অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর ভেতর যে অন্তর্দ্বদ্ব ও ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়; এই ঘটনাপ্রবাহের পরম্পরায় এবং ভারতীয় মদদে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একদল অফিসার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীরউত্তমকে গৃহবন্দী করে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করা হয়। ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখলের পর ৪ঠা নভেম্বর জেলে অন্তরীণ অবস্থায় হত্যা করা হয় চারজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে এবং অন্তর্দ্বন্দ , রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ও রাষ্ট্রীয় অনিশ্চয়তা ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় ছিলো- ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ঝুঁকি।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর অব্দি ঘোর অমানিশায় ডুবে ছিলো বাংলাদেশ এবং আতঙ্কিত ছিলো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। সিপাহী-জনতা উদ্বিগ্ন ছিলো বন্দী স্বাধীনতার ঘোষক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম-এর জন্য। ঘটনার পরম্পরায় ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার তরফ থেকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীরউত্তমকে মুক্ত করে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম সিপাহী-জনতার সেই অনুরোধকে কর্তব্য মনে করে বাংলাদেশ নামক নবজাতক রাষ্ট্রের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন ন্যায়ভিত্তিক, গণতন্ত্রকামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে। বাকশালি ও একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র দর্শন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পাশাপাশি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে আবির্ভূত হন। তৎকালীন বাস্তবতা, সমসাময়িক প্রয়োজন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার নিরিখে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম ডাক দেন জাতীয় ঐক্যের। পরবর্তীতে জাতীয় ঐক্যকে ভিত্তিভূমি বিবেচনা করে বাংলাদেশের সকল ভাষাভাষী ও জাতিসত্তাকে এক সূতোয় গেঁথে নিতে তিনি প্রবর্তন করেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’।
নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে যদি পৃথিবীর জাতীয়তাবাদী নেতার সাথে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম-এর তুলনামূলক আলোচনা করা যায়- তবে আমরা দেখতে পাই যে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সফল প্রবক্তা হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় উচ্চতায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ শুধুমাত্র তাত্ত্বিক বিষয় হয়ে থাকেনি বরং এটি রূপপরিগ্রহ করেছে এক প্রায়োগিক বাস্তবতায়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম সামরিক পোশাক পরিত্যাগ করে নেমে এসেছেন- সাধারণ জনগণের কাতারে এবং সময়ের সাথে সাথে হয়ে উঠেছেন জাতীয় এবং জাতীয়তাবাদী ঐক্যের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্র, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি মূল্যবোধের যে মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি নির্মাণ করে গেছেন; পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি অনন্য এবং প্রায় নজীরবিহীন। এই জন্য পৃথিবীর সকল জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম।
১৯৭৫ সাল পরবর্তী পরিস্থিতিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ধারণার প্রবর্তন করেন। তিনি মনে করতেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য কেবল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ যথেষ্ট নয়; বরং ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে একীভূত করে নতুন একটি পরিচয় গড়ে তোলা জরুরি। এই নতুন জাতীয়তাবাদে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সমান স্থান থাকবে, যা ‘বাঙালি’ পরিচয়ের বাইরে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে একীভূত করবে। তাঁর প্রবর্তিত এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হলো- আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমাত্রিক যা দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখন্ডতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে মনোযোগ দেবে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে এবং বহির্বিশ্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে।
কখনো কখনো বহমান সময় ব্যক্তিকে নির্মাণ করে, আবার কখনো ব্যক্তিই তৈরি করে ইতিহাস। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম যেমন সময়ের নির্মাণ, তেমনি তিনি তৈরি করে গেছেন ইতিহাস। আজকের বাংলাদেশ সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র, যেখানে সময়ের সাথে গড়ে উঠেছে ব্যক্তির এক অনস্বীকার্য মিথোজীবীতা।
ইতিহাস হলো এক পরম্পরা। সেই পরম্পরায় ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর যুগস্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম-এর শুরু করে যাওয়া কর্মযজ্ঞের পরম্পরা হলেন- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সময়ের প্রবহমানতায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারার প্রবাহ করেছে বাঁক বদল। বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোর অমানিশায় আবর্তিত হয়েছে ১/১১-এর ভেতর দিয়ে। তবুও গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্খা নির্বাপিত হয়নি কখনো। কারান্তরীণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনতার মুক্তির মশাল তুলে দিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি সেনা সন্তান তারেক রহমানের কাছে। একদা নির্যাতিত ও কারান্তরীণ পরবর্তীতে নির্বাসিত তারেক রহমান নিজেকে উৎসর্গ করেছেন জনগণ, দেশ ও গণতন্ত্রের মুক্তির কান্ডারি হয়ে।
২০০৮ সালে নির্বাসনকাল হতে অদ্যাবধি লন্ডন প্রবাসেও বুকের ভেতর লাল-সবুজের বাংলাদেশকে ধারণ করে চলছেন তারেক রহমান। আমরা যদি নির্মোহভাবে নির্বাসিত প্রবাস জীবনে সূদুর লন্ডন থেকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক নির্দেশনা, বক্তব্য এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে বিশ্লেষণ করি, তবে আমরা যে তারেক রহমানকে পাই, সেটি তাঁর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্ব থেকে নেতা হয়ে উঠবার অবয়ব। তাঁর যে অবয়ব পরিলক্ষিত হয় আমাদের সামনে, সেই অবয়ব ধারণ করে নিখাদ এক বাংলাদেশকে। আর এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক, বাহক ও রক্ষক। তিল তিল করে ত্যাগ ও তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে যে দূরদর্শী তারেক রহমান তৈরী হয়ে উঠেছেন, সেই তারেক রহমান শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র নন, তিনি বাংলাদেশের তারেক রহমান।
জাতীয়তাবাদের প্রায়োগিক রূপরেখা ছিল ১৯ দফা। সময়ের পরিক্রমায় বাস্তবতার নিরিখে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের তাগিদে ১৯ দফার রূপান্তর ঘটেছে। যুগের তাগিদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতির ক্রান্তিলগ্নে প্রস্তাব করেন ভিশন-২০৩০। আবারো সময়ের পরিক্রমায় বাস্তবতার নিরিখে রূপান্তরিত ১৯ দফা ও ভিশন-২০৩০ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমন্বয় ও নির্দেশনার ভেতর দিয়ে রূপপরিগ্রহ করেছে দেশের সকল গণতান্ত্রিক দল-মতের অন্তর্ভুক্তিমূলক ৩১ দফায়।
সর্বশেষ তারেক রহমান ৩১ দফায় এক সূতোয় বেঁধে দিয়েছেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল সমূহকে এবং সেই সাথে তিনি রচনা করেন বৈচিত্র্যের ভেতর ঐক্যের দর্শন। অতি সম্প্রতি উদ্যাপিত হয়ে যাওয়া ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনসার্টের নামকরণের ভেতর দিয়ে তারেক রহমান যে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন- সেই বাংলাদেশ মনে করিয়ে দেয়, তাঁর প্রয়াত পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই বিশেষ বাক্যটি- যেখানে উচ্চারিত হয়েছে, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড়’।
তারেক রহমান তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে বারংবার বলছেন- দলীয় নেতাকর্মীকে জনগণের মনকে জয় করতে হবে আর জনগণের মন জিতে নেবার ভেতর দিয়েই বিএনপিকে প্রকৃত অর্থে পরিণত হতে হবে জনগণের দলে। মনে রাখতে হবে, আগামীর বাংলাদেশ হবে- জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের ভেতর দিয়ে একটি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। যে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভিত্তিমূল হিসেবে কাজ করবে বহুল কাঙ্খিত ৩১ দফা।
তারেক রহমান মনে করেন- তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীর ওপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছে সেটির জবাব দিতে ৩১ দফার সফল বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন- ৩১ দফার সফল বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে ভোটের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলেই একটি বসবাসযোগ্য ও আগামীর রাষ্ট্র নির্মাণ করা সম্ভব। অতি স¤প্রতি তিনি নিজের একটি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন- তাঁর পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সীমাহীন কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করেছেন। তাঁর একমাত্র ছোট ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক নির্বাসিত জীবনে। তিনি বলেছেন- এসব ভুলে গিয়ে তিনি ৩১ দফার নিরিখে নির্মাণ করতে চান প্রতিবেশি দেশের নাগপাশ থেকে মুক্ত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বীরউত্তম ও আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের ধমনীতে প্রবহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার লালিত স্বপ্ন, বাস্তবতায় চর্চিত তার পিতার রাজনৈতিক দর্শন, আর হৃদয় মূলে গেঁথে আছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বহুধা বিস্তৃত এক মহীরুহ।
▪ লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অবঃ), সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

