বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব মাছ বোঝাই করে ঘাটে ফিরছে শতাধিক ট্রলার। তবে জেলেদের দাবি, ধরা পড়া ইলিশের বেশির ভাগই আকারে ছোট—প্রায় ৭০ শতাংশের ওজন ৪০০ গ্রামের কম। ইলিশ বিক্রি শুরু হয়েছে শহরের নুনিয়াছটা ফিশারীঘাটে, যেখানে সকাল থেকে উপচে পড়া ভিড় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।
আজ সোমবার সকালে ফিশারীঘাটে দেখা যায়, জেলেরা ট্রলারের বরফভর্তি কক্ষ থেকে ইলিশ তুলে ডিঙিনৌকা, স্পিডবোট ও ঝুড়িতে ভরে মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। সকাল ৯টার দিকে এফবি মরিয়ম নামের একটি ট্রলারের জেলেরা ২ হাজার ইলিশ বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। ট্রলারের মাঝি আবদুল গফুর বলেন, ইলিশ ছোট, তাই দামও কম পাওয়া গেছে। এই ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম হলে তিন গুণ দাম পাওয়া যেত।
এফবি আল্লাহরদান ট্রলারের জালে ধরা পড়েছে ১ হাজার ৪০০টি ইলিশ। সেই ইলিশ বিক্রি করে পাওয়া গেছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। জেলে সাদেক মিয়া জানান, উপকূল থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে এসব ইলিশ পেয়েছেন তাঁরা। বিক্রি শেষ হলে আজ রাতেই আবার ট্রলার নিয়ে সাগরে যাবেন।
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই ২৫ অক্টোবর সাগরে তৈরি হয় নিম্নচাপ, পরে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এতে কয়েক দিন ট্রলার নিয়ে সাগরে নামা সম্ভব হয়নি। ৩০ অক্টোবর থেকে শত শত ট্রলার আবার সাগরে নামে। গতকাল রাত থেকে এসব ট্রলার ঘাটে ফিরছে। আজ দুপুর পর্যন্ত ফিশারীঘাটে ভিড়েছে ২৮০টির বেশি ট্রলার। আগামীকাল মঙ্গলবার আরও বেশি ট্রলার ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নুনিয়াছটা ফিশারীঘাটে, যেখানে সকাল থেকে উপচে পড়া ভিড় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদেরছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মাছ ধরার ট্রলার আছে পাঁচ হাজারের বেশি। এসব ট্রলারে কর্মরত জেলে ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গভীর সাগরে ইলিশের নাগাল পেয়ে খুশি ট্রলারমালিক ও জেলেরা। তবে এখন যে আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে, এর খুব একটা দাম পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন পর এই ইলিশগুলো বড় হলে দাম অনেক বাড়ত।
ফিশারীঘাটে ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায়, ৪৫০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৭৫০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়, আর ৯০০ থেকে ১ হাজার গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। শহরের কানাইয়ার বাজার, বাহারছড়া বাজার ও বড় বাজারে এসব ইলিশ কেজিতে আরও ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ফিশারীঘাট থেকে ইলিশ কিনে ব্যবসায়ীরা কার্টনে ভরে ট্রাকে তুলে পাঠাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির উপদেষ্টা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী দুটি ট্রাকে করে ১৪ টনের মতো ইলিশ ঢাকায় পাঠিয়েছেন। আগামীকাল সরবরাহ আরও বাড়বে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের প্রজনন বেড়েছে। তবে এখনো ইলিশগুলো পরিপূর্ণ হয়নি। গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৮ টন। চলতি বছর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার টন।

