বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সভা: বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত করে আলোচনার আহ্বান

Must read

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

তবে সরকার বর্ধিত মাশুল কার্যকরের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। গতকাল নৌপরিবহনসচিব বলেছেন, মাশুল কমানোর সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’–এর ব্যানারে গতকাল রোববার সভার আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে এ সভায় বিভিন্ন খাত ও সংগঠনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।

ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই মাশুল আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে নতুন মাশুল কার্যকর করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে।

গতকালের সভায় আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি অপারেটররা চায় ট্যারিফ বাড়িয়ে দেওয়া হোক। মাশুল বৃদ্ধির নেপথ্যে যারা আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বর্ধিত মাশুল স্থগিত রেখে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, মোংলা ও পায়রায় মাশুল বাড়ানো হয়নি, বাড়ানো হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কোনো খাতে ছয় গুণ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন দিনমজুর, শ্রমিক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের জনগণ। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধার জন্য মাশুল বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড, মায়ের্সক লাইনের পেছনে কারা, এজেন্ট কারা, অফিসে কারা যায়, আমাদের কাছে খবর আছে। বলে দেব কিন্তু। তখন লজ্জা পাবেন। আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে টার্মিনাল দিয়ে দেবেন, সেটা হবে না। পতেঙ্গা টার্মিনাল যারা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের পরিণতি আমরা দেখেছি।’

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে কখনো লোকসান করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে? ব্যবসায়ীরা বাড়তি খরচ কতটুকু নিতে পারবে, সেটা বিবেচনা করা হয়নি। আমরা তো নিউমার্কেটে পণ্য বিক্রি করি না, ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য বিক্রি করি। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের ব্যবসার খরচ এমনিতেই বেশি। এই বাড়তি মাশুল স্থগিত করুন।’

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বড় ভুক্তভোগী হবে ভোক্তা ও রপ্তানিকারকেরা। মাশুল বাড়িয়ে আমরা যেন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ি।’ মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, নতুন বর্ধিত মাশুল কার্যকর হলে ক্রেতারা পোশাক নেবে না। তারা ভিয়েতনাম ও ভারতে চলে যাবে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দর ও ডিপোর মাশুল বাড়ানোর পর একটি ২০ ফুটের কনটেইনারে কাঁচামাল এনে আবার রপ্তানি করতে হলে এখন ১০০ ডলারের বেশি বাড়তি খরচ হবে। এ অবস্থায় ছোট রপ্তানিকারকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাশুল কার্যকর হলে ভিয়েতনামের চেয়ে খরচ তিন গুণ বাড়বে। এটা সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, বন্দরের নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে এ অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত হবে চট্টগ্রাম বন্দর।

বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (বেপজিয়া) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, চীন, ভারত ও কম্বোডিয়া ব্যবসার খরচ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। আর আমরা খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছি। এটা হতাশাজনক।’

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কাউকে লাভ করানোর জন্য অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, মার্কিন ট্যারিফ কমাতে বিদেশে গিয়ে তদবির করেছেন, কিন্তু দেশে ট্যারিফ না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়ে দিলেন, এটা কীভাবে হয়?

সচিব বললেন, মাশুল কমানোর সুযোগ নেই

নৌপরিবহনসচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, গত প্রায় ৪০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে মাশুল বাড়ানো হয়নি। ১৯৮৬ সালের পর এবার প্রথম মাশুল বাড়ানো হয়েছে। তাই এই মাশুল কমানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পাঁচ বছর পরপর এটা বাড়ানো উচিত ছিল।

গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এই নিয়োগ হয়ে যাবে। তাদেরও মুনাফার বিষয় আছে। তাই মাশুল কমানোর সুযোগ নেই। সমীক্ষার ভিত্তিতে এই মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে নৌপরিবহনসচিব বললেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দুটিসহ দেশের মোট তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য এই অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়িয়ে লিড টাইম কমিয়ে আনতে বিদেশি অপারেটর ছাড়া উপায় নেই।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article