ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ‘সহশিক্ষা’ চালুর যে সুপারিশ রয়েছে, তা বাতিলের দাবি উঠেছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ দাবির কথা শোনান ইডেন মহিলা কলেজের একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নারীদের উচ্চশিক্ষা ‘মারাত্মকভাবে ব্যাহত’ হবে এবং সংবিধানে থাকা সমান সুযোগের নিশ্চয়তা লঙ্ঘন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইডেন মহিলা কলেজর সাবেক ভিপি হেলেন জেরিন খান।
তিনি বলেন, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ দীর্ঘকাল ধরে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ধর্মপ্রাণ ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলো নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র।
“কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশের ৬(১) (খ) ধারা অনুযায়ী ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে সহশিক্ষা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থী। এটি নারী শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে এবং শতবর্ষব্যাপী নারী শিক্ষার ঐতিহ্য নষ্ট করবে।”
তিনি বলেন, “সহশিক্ষার প্রস্তাব কার্যকর হলে ঢাকায় নারীদের উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে; তাদের প্রবেশাধিকার কমে যাবে এবং সংবিধানে থাকা সমান সুযোগের নিশ্চয়তার লঙ্ঘন ঘটবে।”
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আসন সংখ্যা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ কমানো হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে এবং তুলনামূলক সামর্থবান অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকবে, যা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বাড়াবে।
“আমরা শান্তি চাই, স্থিতি চাই। ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র মর্যাদা যেন বলি না হয়, ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে যেন সহশিক্ষা চালু না হয়, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ যেন না হয়, এটাই আমাদের কাম্য।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইডেন মহিলা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিশরাত বেগম, সাবেক শিক্ষার্থী খন্দকার ফারহানা ইয়াসমীন, অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা সালমা, রোকন সিদ্দীকী, ইসরাত জাহান পান্না, ফাহিমা আক্তার মুকুল, রাজিয়া সুলতানা ও অধ্যাপক নাহিদ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রস্তাব করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইমেইলে ও সরাসরি মতামত সংগ্রহ করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৬ হাজারেরও অধিক মতামত পাওয়া গেছে।
বর্তমানে মতামতগুলো সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে তুলে ধরে মন্ত্রণালয় বলছে, এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের সাথে শিগগিরই ধারাবাহিক পরামর্শ সভা আয়োজন করা হবে।
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কার্যক্রম যখন চলছে, তখন কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে আন্দোলন চালানো শিক্ষার্থীরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকে পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গত রোববার সকালে সায়েন্সল্যাব এলাকায় মিছিল ও কয়েক মিনিট সড়ক অবরোধ করে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্বকীয়তা রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। গত সোমবার তারা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

